নাটোরের গুরুদাসপুরে দুই রাতে দরিদ্র ১৮ কৃষকের ১৮টি শ্যালো মেশিন চুরি হয়েছে। এসব শ্যালো মেশিনগুলো ফসলের খেতে সেচ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেচের শ্যালো হারিয়ে ২শত বিঘায় সেচ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শতাধিক কৃষক। গত শুক্রবার ও শনিবার দিবাগত রাতে গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের সিধুলী ও উদবাড়িয়া মাঠ থেকে এসব সেচযন্ত্র চুরি হয়। চুরির ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি ভুক্তভোগি কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উদবাড়িয়া গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন মন্টু, আবু তাহের, তৌহিদুল ইসলাম, আনাদুল, তোতা মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান আলী, আসির উদ্দিন, মুনতাজ, আব্দুস সামাদের ১১টি সেচযন্ত্র শনিবার দিবাগত রাতে উদবাড়িয়া মাঠ থেকে চুরি হয়েছে। এর আগে সিধুলী মাঠ থেকে কৃষক তহিদুল, রফিকুল, আব্দুল আলিম, মিজানুর ও শফিকুলের ৭টি শ্যালো চুরি হয়।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, উদবাড়িয়া ও সিধুলী মাঠের প্রায় ২ শ বিঘা জমিতে সেচ নির্ভর রসুন, পেঁয়াজ, ধনেসহ শীত কালিন সবজির আবাদ করা রয়েছে। রবি মওসুমে প্রতিটি সেচের জন্য বিঘায় ১ হাজার টাকা চুক্তিতে শতাধিক কৃষক ১৮টি শ্যালো মেশিন মালিকের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। চুরি হওয়া শ্যালো মেশিন থেকেই এসব জমিতে সেচ দেওয়া হতো। কিন্তু সেচযন্ত্রগুলো চুরি হওয়ায় শ্যালো মালিক এবং কৃষক উভয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কৃষক তোফাজ্জল হোসেন মন্টু, আবু তাহের, তহিদুল, রফিকুল, আব্দুল আলিম বলেন, শুক্রবার ও রবিবার সকালে জমিতে সেচ দিতে গিয়ে তারা দেখেন শ্যালোগুলো নেই। তখন আশপাশে তল্লাশি করেও সন্ধান পাননি। এতে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কারণ চুরি যাওয়া ১৮টি শ্যালো মেশিনের পানিতে প্রায় শতাধিক ক্ষুদ্র চাষী প্রায় ২ শত বিঘা জমিতে সেচের চাহিদা মেটাতেন। সেচযন্ত্রগুলো চুরি হওয়ার পর সেচের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি তারা। এতে করে ফসল নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কৃষকরা বলেন, চুরি যাওয়া শ্যালোগুলো গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের ছিল। একরাতে দুই বিলের আশপাশের ২ শত বিঘার মধ্যে সব শ্যালো চুরি হয়েছে। কৃষকের পক্ষে তাৎক্ষণিক শ্যালো কিনে জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা সেচ দেওয়ার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ চান।
গুরুদাসপুরের কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, কৃষকের শ্যালো মেশিন চুরি হওয়ায় সেচ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে কৃষকদের থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শ্যালো মেশিন চুরির সত্যতা নিশ্চিত করে ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার অবলম্বন হারিয়ে হতাশায় পড়েছেন কৃষকেরা। তিনি কৃষকের সেচের শ্যালো মেশিনগুলো উদ্ধারে পুলিশের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, কৃষকের শ্যালো মেশিন চুরির বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। তাছাড়া কৃষকদের সেচযন্ত্রগুলো নিরাপদে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ পেলে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও চুরি হওয়া সেচযন্ত্রগুলো উদ্ধারে পুলিশ কাজ করবে।