ঢাকামঙ্গলবার , ২০ মে ২০২৫
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. কৃষি-সংবাদ
  7. খেলা-ধুলা
  8. চাকরি-খবর
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাত্রা
  11. তথ্য ও প্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. দুর্নীতি
  14. ধর্ম
  15. ফিচার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চাপিলা-নাজিরপুর ইউনিয়নে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূরীকরণের একমাত্র উপায়

Link Copied!

তুলসীগঙ্গা ও মির্জামামুদ নদী উদ্ধার করে পুনঃ খনন এবং ড্রেন নির্মান

চলনবিলের প্রনকেন্দ্র নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা। এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩২৮্ জন। মোট আয়তন ৭৮ বর্গ কিলোমিটার (৫০ হাজার ২১৪ একর), মোট খানার সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬৭২টি ( ২০২২ সালের জনশুমারি)। ভুমি এবং মৎস্য অফিসের তথ্যমতে উপজেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ৯টি (আর এস নক্সা হিসেবে ৮টি)। উপজেলার বকু চিরে প্রবাহিত,নদী ৯টি নদি হচ্ছে-গুমানী নদী দৈর্ঘ্য ১৫কি.মি. নন্দকুজা নদী দৈর্ঘ্য-১৬কি.মি. আত্রাই নদী দৈর্ঘ্য ১৫ কি.মি. বেসানী নদী ৩ কি.মি. তুলসীগঙ্গা নদী ১৫কি.মি. নদী, বোয়ালিয়া নদি ১৩ কি.মি. খুবজিপুর মরা আত্রাই নদী ৫ কি.মি. মির্জামামুদ ১৪ কি.মিটার এবং বিলকাঠোর-রানিগ্রম নদী ৫ কিঃ মিটার দৈর্ঘ্য। পুকুর সংখ্যা উপজেলা মৎস অফিসের হিসেবে ৭৩৬২টি, যার আয়তন প্রায় ২ হাজার হেক্টর।

বেসরকারী হিসেবে বর্তমানে পুকুর সংখ্যা ১২ হাজারের বেশী। পুকুর গিলেছে প্রায ৩ হাজার হেক্টর কৃষি জমি। প্রভাবশালী ভূমি খেকো পুকুপ খনন সিন্ডিকেটের দৌরাত্তে কৃষকরা হারাচ্ছে তাদের মূল্যবান কৃষি জমি।যত্র তত্র পুকুর খনন করায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে সারা বছর কৃষি জমি ডুবে থাকছে। ফলে ঐ জলাবদ্ধ জমিতে কৃষি আবাদ করতে পারছেনা।

উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ৯টি নদীর মেেধ্য নন্দকুজা, আত্রাই, গুমানী এবং বেসানী নদী প্রভাবশালী নদী খেকোদের দখল-দুষনের নির্মম ঝুঁক্কির ধাক্কা সহ্য করেও অর্ধমৃত হয়ে কোনরকম চলমান আছে, তবে বোয়লিয়া নদি আর এস নক্সা থেকে উ্ধাও হয়ে গেছে।বোয়ালিয়া নদির মামুদপুর অংশে কিছু উদ্ধার করে আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মান করে গৃহহীনদের দেওয়া হয়েছে. কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, চাপিলা ও নাজিরপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এককালের প্রমত্মা তুলসীগঙ্গা ও মির্জামামুদ নদী প্রভাবশালী নদী খেকোদের দখল- নির্যাতনের নির্মম মরন কামড় সহ্য করতে না পেরে একেবারেই মরে গেছে বললে ভুল হবেনা। দখলদারেরা নদীর হাড্ডি হুড্ডি সবই সাবার করেছে। শুধু নদী খেকোদের দোষ দিলে আবারো ভুল হবে, এর সাথে জড়িত ভুমি অফিসের অসাধু কড়িৎকর্মা অফিসারদের কারিশমা। টাকার বিনিময়ে রাতারাতি ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে বনে গেছে বৈধ মালিক আর অফিসাররা হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

এই দুইটি নদীর উপর গড়ে উঠেছে পুকুর, মসজিদ, মাদ্রাসা, বসতবাড়ি , বাগান, পাকা ইমারত , রাস্তা,ইত্যাদি। সিএস রেকর্ড নক্সায় নদী থাকলেও আরএস রেকর্ড নক্সায় অদৃশ্য শক্তির ছোঁয়ায় প্রবাহমান নদীর অস্তিত্ত¡ই হারিয়ে ফেলেছে। কথায় আছে ‘ নদী মরে গেলেও তার বহমান ধারা থাকে’। এখন সেই ধারাই জানান দিচ্ছে‘ এখানে এক নদী ছিল জানলোনাতো কেউ’। এই তুলসীগঙ্গা ও মির্জা মামুদ নদী দিয়ে চন্দ্রপুর, মহারাজপুর, লক্ষিপুর, গোপীনাথপুর, বৃকাশো, খামারপাথুরিয়া, নওপাড়া, বৃগড়িলা, বৃপাথুরিয়া এবং রানি নগর ও চাকল বিলের পানি নিষ্কাশন হতো। মুরব্বিদের কাছে শোনা যায় এই দুই নদী দিয়ে এক সময় বড় নৌকা , বজরা এবং লঞ্চ চলাচল করতো। এখন সেই নদীর বুকে ইমারত, বসতবাড়ি, পুকুর হয়েছে, কৃষি আবাদ হচ্ছে, শাক-সব্জি চাষ হচ্ছে। এই তুলসীগঙ্গা ও মির্জা মামুদ নদী দিয়েই বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়ারি ইউনিয়নের বিস্তির্ন এলাকার পানি বর্ষার সময় প্রবাহিত হয়।

এখন গুরুদাসপুর উপজেলায় চলছে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষের উন্নয়নের জোয়ার। মাছ এবংপুকুর পাড়ে কলা, পেপে এবং শাক সব্জি চাষের অর্থনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে দেশে।পরিকল্পনা হচ্ছে গুরুদাসপুরের জীবন্ত মাছ বিদেশে রপ্তানির। আসবে বৈদেশিক মুদ্রা, গড়বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। চলছে প্রতিযোগীতা চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। পুকুর গিলছে কৃষি জমি ,নদী,নালা, খাল-বিল আর জলাশয়।মানা হচ্ছেনা সরকারী আইন-কানুন, বিধিবিধান। অভিযোগ আছে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্ত থেকে নিম্ন শ্রেনির কর্মচারিরা প্রত্যক্ষ এবংপরোক্ষভাবে পুকুর খননে সহযোগিতা করেছেন ।

প্রতিরোধে স্থানীয় নদী রক্ষা আন্দোলন , চলনবিল রক্ষা আন্দোলন, পরিবেশ বাাঁচাও আন্দোলন (বাপা),সচেতন নাগরিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলনের নেতা-কর্মিরা মানব বন্ধন,র‌্যালি, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা ভাবে প্রতিবাদ জানালেও প্রশাসনের অসহযোতিায় প্রভাবশালীদের কাছে অপ্রতিরোধ্যই থেকে গেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এই অপ্রতিরোধ্য পুকুর খননের বেপরোয়া কর্মযজ্ঞ বন্ধে বিভিন্ন সময়ে মিটিং করেপুকুর খনন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন। তিনি জনসচেতনতামুলক মাইকিং করেছেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদেরকে এবং প্রশাসনকে কঠোর ভাষায় নির্দেশ দিয়েও ব্যর্থ হয়ে তিনি নিজে স্পটে গিয়ে পুকুর খননের যন্ত্র এক্সেভেটর জব্দ করেছেন, পুড়িয়ে দিয়েছেন । জেলা ও উপজেলা আইন শৃ্খংলা মিটিংয়ে প্রশাসনকে চাপ দিয়েছেন । তারপরও থেমে নাই পুকুর খননের কর্মতৎপরতা। এ অপ-তৎপরতা বন্ধে মাননীয় হাইকোর্ট এবং সরকারি নির্দেশনা বাষÍবায়নে প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক গনআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

অপরিকল্পিত ভাবে যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপজেলার চাপিলা আর নাজিরপুর ইউনিয়নবাসী। নতুন খননকৃত পুকুরের চাপে পরে কৃষি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়েছে। এদিকে নদী খেকোদের অবৈধ দখলের ফলে তুলসী গঙ্গা ও মির্জামামুদ নদী অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলায় পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকায় এই দুই ইউনিয়নের মহারাজপুর,বৃ পাথুরিয়া, বৃগড়িলা, বৃ কাশো,পশ্চিম নওপাড়া, বৃ চাপিলা, রানীনগর, লক্ষীপুর,খামার পাথুরিয়া বিল চাকলসহ এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও কৃষি জমি স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধ থাকায় সারা বছর পানিতে ডুবে থাকে। এর প্রভাবে চাপিলা ও নাজিরপুর ইউনিয়নের মুল্যবান কৃষিজমি,অভ্যন্তরীন রাস্তা,পাকা সড়ক, ফলজ ও বনজ বাগান,শ্ক-সব্জির বাগান, বাড়িঘর স্কুলমাঠ ( বৃ পাথুরিয়া হাইস্কুল ও প্রইমারী স্কুল,মহারাজপুর মাদরাসা ও প্রাইমারি স্কুল এবং মহারাজপুর বাজার,বৃগড়িলা প্রাইমারি স্কুল ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পানির নীচে তলিয়ে থাকায় কৃষি আবাদ সম্পুর্নভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কৃত্রিম জলাবদ্ধ কৃষি জমিতে পুকুর খনন করতে বাধ্য হচ্ছে জমির মালিকরা। অস্বাস্থকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

পানিবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে, পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মশার উপদ্রপ বেড়েছে, ফলজ ও বনজ বাগান এবং বাঁশবাগান ধ্বংস হয়ে গেছে,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে, রাস্তা চলাচল অনুপযোগী হয়ে গেছে সবমিলে প্রাকৃতিক পরিবেশ দুষিত হয়ে মানুষ বসবাসের সম্পুর্ন অনুপযোগী এবং মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগপুর্ন হয়ে পড়েছে। প্রায়ই জনজীবনে জলবায়ু ও পরিবেশগত নতুন নতুন নানা ধরণের রোগের প্রদুর্ভাব ঘটছে। বেপরোয়া পুকুর খননের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার ফলে এই সমস্যা এখন উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নেই মহামারি আকার ধারণ করেছে। তবে চলতি বছরে গণমাধ্যমে এবং সুশিল সমাজের চাপে গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের পরও ভ’মি খেকো সিন্ডিকেট পুকুর খনন করতে পারেনাই।

মানবসৃষ্ট এই দুর্যোগ থেকে উদ্ধার পেতে হলে ,চাপিলা,নাজিরপুর ইউনিয়নের স্থায়ী জলাবদ্ধতা দুর করতে একমাত্র উপায় -তুলসীগঙ্গা ও মির্জামামুদ নদী জরুরী ভিত্তিতে সিএস রেকর্ডমুলে জরপি করে সিমানা নির্ধারন ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে এবং পুনঃ খনন করে সচল করতে হবে। পাকা ড্রেন নির্মান করে নদির সাথে সংযোগ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বতি সরকারের পরিশে,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রলয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান,নাটোর জেলা প্রশাসক আসমা শাহিন এবং গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার ফাহমিদা আফরোজ সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসি।

#সাংবাদিক ও কলামিষ্ট- আবুল কালাম আজাদ 

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।