আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো ঐতিহাসিক চরমোনাই মাদরাসা ময়দানে আয়োজিত ৩দিনব্যাপী অগ্রহায়ণ মাহফিল। গত ২৭ নভেম্বর’২৪ বুধবার বাদ জোহর আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই’র উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়ে আজ ৩০ নভেম্বর’২৪ শনিবার সকাল ৮.৩০টায় সমাপনী অধিবেশন ও আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় লক্ষ লক্ষ মুসল্লীদের আধ্যাত্মিক এ মিলনমেলা।
সমাপনী অধিবেশনের বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, মানুষ আজ আল্লাহকে ভুলে নাফরমানি করছে অহরহ। অথচ একজন মানুষ কবরে গিয়ে মাফ না পাওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিকৃষ্ট পশুর মত মনে করতে হবে। সুতরাং তাক্বওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনের মাধ্যমে মহান রবের সন্তুষ্টি নিয়ে কবরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহর ভয় যার অন্তরে নেই ঐ মানুষ এমনকি আলেম, মুফতী ও পীরের কোন মূল্য নেই। তিনি বলেন নিজেকে নিজে ছোট মনে করতে হবে।
আমিত্ব ভাব ও তাকাব্বুরী পরিত্যাগ করতে হবে। হিংসা বিদ্বেষ পরিত্যাগ করতে হবে। ঘোড়ার মুখে যেভাবে লাগাম থাকে সেভাবে রাগের মুখে লাগাম লাগাতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা জিকিরের মাধ্যমে ক্বলব পরিশুদ্ধ করতে হবে। গীবতের মতো গুনাহ থেকে বাচিয়া থাকতে হবে। পরিবারের সবাইকে দ্বীন শিক্ষা দিয়ে দ্বীনের পাবন্দি করতে হবে। পরিবারে খাছ পর্দা জারি করতে হবে। সকল প্রকার নেশাজাত দ্রব্য হতে বাচিয়া থাকতে হবে। আলস্নাহওয়ালাদের কিতাব পড়তে হবে। সাপ্তাহিক হালকায়ে জিকির ও তালীমে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। ছহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে।
সমাপনী অধিবেশনের বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই মাহফিল বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আখেরী মুনাজাতে অংশ নেয়া প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের মোবারকবাদ জানান তিনি।আখেরী বয়ানের পর পীর সাহেব চরমোনাই বিভিন্ন লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় তিনি মুরিদানদের সঠিক পথে পরিচালিত হবার বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। অতঃপর তিনি তাওবা করিয়ে গুনাহ থেকে বাচিয়া থাকার শপথ করান।আখেরী মুনাজাতে পীর সাহেব চরমোনাই ফিলিস্তিন, ভারত, কাশ্মীর, মিয়ানমার, সিরিয়া সহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের নিরাপত্তা ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করেন।উল্লেখ্য, মাহফিলে আসা মুসল্লীদের মধ্যে ২৭ নভেম্বর রাত ১১টায় খুলনা নিবাসী মোঃ আলতাফ হোসেন (৬৫) পিতা মৃত ইজহার আলী এবং একই তারিখ রাত ১০টায় রায়েরবাগ, ঢাকা নিবাসী রফিকুল ইসলাম (৬৩) পিতা সালামত উল্লাহ বার্ধক্যজনিত ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। উভয়ের জানাযা শেষে মাহফিল হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
চরমোনাই অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতালে এবছর প্রায় দুই সহস্রাধিক মুসল্লীর চিকিৎসা দেয়া হয়। এবারের মাহফিলে ৪জন অমুসলিম পীরসাহেব চরমোনাই ও শায়খে চরমোনাইর হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।