গুরুদাসপুরে মতবিনিময় সভায় জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আজিজের দেওয়া বক্তব্যের জেরে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে হট্টগোল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে একপক্ষের দুইজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করা হয়েছে।
পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের শিক্ষা সংঘ সড়কে শনিবার দিবাগত রাত পৌনে দশটার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পন্ড হয়ে যায় বিএনপির সভা। তবে এঘটনায় শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান বাবলু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুলাল সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক রাখার কথা জানিয়েছেন গুরুদাসপুর থানার ওসি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতা আব্দুল আজিজ ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল রঞ্জুর পক্ষে ভাগ হয়ে যান দলের নেতাকর্মীরা। আব্দুল আজিজের পক্ষে অবস্থান নেন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান বাবলু এবং রঞ্জুর পক্ষে আসেন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুলাল সরকার। তারা দুজনেই গুরুদাসপুর পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, শিক্ষা সংঘের ভেতরে আলোচনা সভায় আব্দুল আজিজ বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে নেতাকমীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা এড়াতে চাঁচকৈড়ের প্রেগ্রাম বিশ্বরোডে নিয়ে গিয়েছি- দুলাল সাহেব এবং বাবলু সাহেবের অনুমতি সাপেক্ষে। কারণ রাজনীতি তো আমরা তিনজন-ই করি। আমরা বিগত সময়ে দলের দুর্দিনে, দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে কাউকেই খুঁজে পাইনি।’ এসময় তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান নাটোর-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা আবু হেনা মোস্তফা কামাল রঞ্জুর সমর্থক পৌর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি নাজমুল করিম নজু। একপর্যায়ে আব্দুল আজিজের লোকজন নজুকে ঘিরে ধরেন। ওই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে বাইরে অপেক্ষমান নেতাকর্মীদের মধ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুইপক্ষের মধ্যে কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
এসময় অন্তত ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ওই গুলিতে আব্দুল আজিজের সমর্থক পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুফি মো. আবু সাঈদ ও বিএনপি কর্মী আফতাব হোসেন আহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। তারা একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গুরুদাসপুর পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান বাবলু বলেন, মতবিনিময় সভায় পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুলাল সরকারের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলায় তার পক্ষের দুই নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দুলাল সরকার বলেন, আব্দুল আজিজ উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তাদের এক নেতা প্রতিবাদ করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মশিউর রহমান বাবলুর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার লোকজনকে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে শর্টগানের ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়েন বাবলুর লোকজন। তবে ওই গুলিতে দুই পক্ষের কেউ আহত হয়নি।
জেলা বিএনপির সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, পরিকল্পিতভাবে তার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালিয়েছেন আব্দুল আজিজের এবং বাবলুর লোকজন। তিনি এই হামলার নিন্দা জানান।
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ বলেন, তিনি শান্তিপূর্ণভাবে সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে রঞ্জুর সমর্থক বিএনপি নেতা নাজমুল করিম নজু তার দিকে তেরে আসেন। এতে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এর বেশি তিনি কিছু জানেন না।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসমাউল হক জানান, বিএনপির দুইপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বিএনপির কোনো নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। থানায় কোনো পক্ষ অভিযোগ না দেওয়ায় কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তবে ঘটনাসস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।#