নাটোরের গুরুদাসপুরে চিকিৎসা আর ন্যূনতম মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত চারজন অসহায় মানুষকে ৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাসেল হোসাইন। মঙ্গলবার (১৭জুন) সকালে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভবনে তাদের হাতে অনুদান তুলে দেন প্রবাসী রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রবিউল করিম।
ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রঞ্জনা রানী গুরুতর আহত কৃষক বুদ্দু মিয়া চোখে আঘাত পাওয়া শ্রমজীবী নারী আমেনা বেগম এবং একাকি জীবনযাপনরত বিধবা সুকজান বেওয়া প্রবাসী রাসেল হোসাইনের সহানুভূতিতে ফিরে পেয়েছেন নতুন জীবনের সন্ধান।
রঞ্জনা রানী গুরুদাসপুর উপজেলার পোস্ট অফিস পাড়ার বাসিন্দা চিকিৎসার জন্য ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থ সংকটে থেমে যায় তার চিকিৎসা। সংবাদমাধ্যমে খবরটি আসার পরই রাসেল হোসাইন তার চিকিৎসার জন্য ৬ লাখ টাকা অনুদান দেন।
বিলহরিবাড়ি গ্রামের কৃষক বুদ্দু মিয়া মাঠে কাজ করতে গিয়ে পায়ে মারাত্মক আঘাত পান সময়মতো চিকিৎসা না করাতে পরে তিনি পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। মাত্র ৪০ হাজার টাকার প্রয়োজন থাকলেও পরিবার তা জোগাড়ে অক্ষম। রাসেল হোসাইন সেই অর্থ দিয়ে তার চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করে দেন।
সাবগাড়ী এলাকার নারী শ্রমিক আমেনা বেগম। ধান মাড়াইয়ের সময় দুর্ঘটনায় এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাত্র ৩০ হাজার টাকায় অপারেশন করে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। রাসেল হোসাইন দেরি না করে তার অপারেশনের জন্য সেই অর্থ প্রদান করেন।
একই এলাকার অসহায় বিধবা সন্তানহীন নারী সুকজান বেওয়া নানা রোগে ভুগছেন কিন্তু দিনমজুরির টাকায় চিকিৎসা করানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। এই মর্মান্তিক অবস্থায় রাসেল হোসাইন ৩০ হাজার টাকা দিয়ে তার সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এই চারজনের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হয়েছে শুধু একজন মানুষের উদারতায়।
কৃষক বুদ্দু মিয়া বলেন, “আমি ভাবতাম গরিবের কষ্ট কেউ দেখে না। রাসেল সাহেব না থাকলে হয়তো কোনোদিন আর হাঁটাই হতো না। আল্লাহ তাকে অনেক ভালো রাখুক।”
রঞ্জনা রানী বলেন, “আমার চিকিৎসা থেমে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম আর ফিরতে পারবো না। রাসেল হোসাইনের সাহায্য আমার জন্য নতুন জীবন। আমি তার প্রতি চিরঋণী। এমন মানুষগুলোই প্রমাণ করেন ভালোবাসা ও সহানুভূতি এখনও বেঁচে আছে।”
রাসেল হোসাইন বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য এই বিশ্বাস থেকেই আমি কাজ করি। আমার ক্ষুদ্র চেষ্টা যদি কারও জীবন রক্ষা করতে পারে, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। দেশ থেকে দূরে থাকলেও দেশের মানুষের পাশে থাকতে চাই সবসময়।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা যে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, সেই দেশের মানুষ যদি কষ্টে থাকে, সেটি আমরা মেনে নিতে পারি না। ছেলের এই মানবিকতা একজন পিতা, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার জন্য গর্বের বিষয়।